হাতিয়া প্রতিনিধি: নোয়াখালীর হাতিয়ায় হেদায়েত উল্লাহ নামে এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নামে অনিয়ম ও দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীগণ অনিয়ম ও দুনীতির লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে- হাতিয়া উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাদিয়া চৌরাস্তা মাহমুদুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্ল্যাহ’র বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচার দাবী করে লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি গঠনে অনিয়ম, ভর্তি সংক্রান্ত অনিয়ম, চাঁদবাজী, সম্পত্তির আত্মসাতের অপচেষ্টা, উপবৃত্তি ও সরকারি অনুদান আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধানে গেলে কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, পশ্চিম সোনাদিয়া চৌরাস্তা মাহমুদুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২৯০ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। কিন্তু, এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্ল্যাহ নিজের ইচ্ছামত পরিচালনা করে দিনদিন বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান খারাপ করে দিচ্ছেন। হেদায়েত উল্ল্যাহ নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন না। তিনি প্রায় সময় ক্লাশ নেন না। বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে তাকে হাতিয়া উপজেলা সদরসহ স্কুল থেকে ৫/৬ কিলোমিটার দূরে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি ও দোকানে বসে আড্ডা দিতে দেখা যায়।
বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যা সর্বমোট ৫ জন। প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্ল্যাহ’র স্ত্রী-ও এই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। বেশিরভাগ সময় তিনি-ও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। আরেকজন আছেন পিটিআইতে। ফলে বাকি ২ জন শিক্ষক কোনো রকমে বিদ্যালয়ের ক্লাশ পরিচালনা করেন।
ক্লাশ না করে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে ঘোরাঘুরি সম্পর্কে কয়েকজন অভিভাবক জানতে চাইলে, প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্ল্যাহ অভিভাবকদের সাথে দূর্ব্যবহার করে বলে জানান অভিভাবকরা।
তার এই অনিয়ম ২০১৮ সালে হাতিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি, হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মাহাবুব মোর্শেদ লিটনের নজরে আসে এবং প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্ল্যাহ হাতেনাতে ধরাও পড়েন।
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্ল্যাহ’র অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উপজেলার বিচ্ছিন্ন এলাকা বয়ারচরে বদলি করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকতাকে নির্দেশ দেন। বিশ^স্ত সূত্রে জানাযায়- অদৃশ্য কারণে তার বদলি না হওয়ায় তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন।
তিনি তার অনিয়মকে ঢাকতে নিজের মতো করে সাজানো একটি পকেট কমিটি গঠন করেন। বর্তমান এই পকেট কমিটি গঠিত হয় ১৯-০৩-২০২০ ইং এ। ০৪-০৬-২০১৯ ইং এ প্রাক্তন কমিটির সভাপতি মারা যান। কমিটির মেয়াদকাল ছিল ৩ বছর। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কথা ১১ এপ্রিল ‘২১ এ। মেয়াদ উত্তীর্ণ না হলে সভাপতির মৃত্যুর পর নিয়ম অনুযায়ী সভাপতি হবেন থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার।
সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তিনি গঠন করেছেন নতুন পকেট কমিটি। সেখানে-ও অনিয়ম। আত্মীয়-স্বজন ও নিজস্ব লোকজন দিয়ে গঠন করেন ’স্কুল পরিচালনা কমিটি’। সরকারি নীতিমালায় ১১ জন সদস্যের কথা বলা হলেও তিনি গঠন করেছেন ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। নীতিমালায় কমিটির সভাপতি স্নাতক পাশ হওয়ার কথা থাকলেও তিনি শুধু অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন একজনকে সভাপতি করেছেন। আবার ৯ জনের মধ্যে ৫ জনই তার আত্মীয় স্বজন।
নীতিমালা ১.৪ ধারায় দাতা সদস্য এবং ১.১১ ধারায় ইউপি মেম্বারকে রাখার শর্ত থাকলেও দাতা সদস্য ও ইউপি মেম্বারকে রাখেননি কমিটিতে। সরকারি নিয়ম লঙ্ঘনকরে লুটপাট করার জন্য তৈরি করেছেন জগাখিচুড়ী কমিটি এবং তা দিয়ে করে চলছেন লুটপাট।
বিদ্যালয়ের দাতা পরিবারের পক্ষ থেকে মুহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্লাহ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তার খেয়ালখুশিমতো বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। এ ছাড়া তিনি নানা দুর্নীতি করে আসছেন। আমরা তার এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলাতে আমাদেরকে বাদ দিয়েই নিজের ইচ্ছা মতো কমিটি গঠন করেছেন তিনি। যদিও সরকারি নীতি-মালায় দাতা সদস্য বাধ্যতামূলক কমিটিতে থাকার কথা থাকলেও তিনি আমাদেরকে রাখেননি। তারপরও এই কমিটি প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে কিভাবে অনুমোদন পেল তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা যতটুকু জায়গা স্কুলকে দান করেছি, তার প্রায় স্কুলকে বুঝিযে দিয়েছি। তারপরও সে স্কুল সংলগ্ন আমাদের জায়গা ও দোকান দখল করার পায়তারা করছে। আমরা এই প্রধান শিক্ষকের এই জাতীয় কাজের জন্য সুস্থ তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করি।
এ বিষয়ে ইউপি মেম্বার মোজাহার উদ্দিন জানান- সরকারি বিধি অনুযায়ী আমাকে স্কুল কমিটিতে রাখা আবশ্যক। কিন্তু প্রধান শিক্ষক আমাকে কেন কমিটিতে রাখেননি, তার আমার বোধগম্য নয়। তবে তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দাতা সদস্যদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের সাথে দাতাদের দোকান ঘর নিয়ে ঝামেলা চলছিল। আমি নিজ উদ্যোগে হাতিয়ার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির দু‘জন সদস্যকে নিয়ে স্কুলের জায়গা পরিমাপ করে পিলার স্থান করে দিয়েছিলাম। কিন্তু রাতের আঁধাওে প্রধান শিক্ষক সীমানার পিলার তুলে দাতাদের সাথে আবারও দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েন। আমি চাই সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে তার সঠিক বিচার হোক।
এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্লাহর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে- তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো করা হয়েছে তার সবগুলোই মিথ্যে। এগুলো আমার বিরুদ্ধে দাতা সদস্যদের মিথ্যা প্রপাগান্ডা। প্রয়োজনে আমি এই স্কুলে থাকবো না। তবুও আমি চাই- এই বিষয়ে সুস্থ তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টার সমাধান হোক।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জনাব ভবরঞ্জন দাসের কাছ থেকে জানতে চাইলে- তিনি জানান, আমি প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমি এলাকাবাসীর অভিযোগ বিষয়ে খোজ খবর নিচ্ছি। তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলে, প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্ল্যাহ’র বিরুদ্ধে সরকারি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।